April 23, 2024, 8:38 am

বাল্য বিবাহ কি ধর্ষন রোধ করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারবেঃ এ্যাডঃ সারা

Reporter Name
  • Update Time : Thursday, June 18, 2020
  • 134 Time View

স্টাফ রিপোর্টারঃ ইদানিংকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায় ই দেখি বাল্য বিবাহ আটকানোর পর একটা শ্রেনী তার বিরুদ্ধতা করে তাদের যুক্তি হলো-

প্রয়োজনবোধে বিয়া না করতে পেরে তারা ধর্ষন করে,প্রেম করে পালিয়ে বিয়া করলে তো সমস্যা হয়না,কমবয়সে লিভ টুগেদার কিংবা কল গার্ল হলেতো আইনত কোন সমস্যা হয়না, একসময় ১০/১২ বছরে বিয়ে হলেও মেয়েরা তখনই নরমাল প্রসেসিং এ বাচ্চা জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে!!তাদের লজিক গুলোও একদম ফেলে দেবার মত নয়।

    এবার আমরা জেনে নেই বাল্য বিবাহ কি??

বিবাহের ক্ষেত্রে ২১ বছর পূর্ন করেন নাই এমন কোন পুরুষ এবং ১৮ বছর পূর্ন করেন নাই এমন কোন নারী কোনরকম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে সেটা বাল্য বিবাহ বলে গণ্য হবে!!
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ তে এর শাস্তির বিধান ও আছে তারমানে এটা একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ!!

কদিন আগে ফরিদপুরে আশুলিয়ার হামজা (২১) নামক এক যুবক ফরিদপুরে ১৩ বছর ৪ মাসের এক মেয়েকে বিয়ে করা অবস্হায় ওখানকার একটি স্বেচ্ছাসেবী তরুন সংগঠনের সহায়তায় প্রশাসন তাকে আটক করে এবং পুলিশ তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।

এটার পক্ষে বিপক্ষে অনেকে পোস্ট করে বিপক্ষীয় মতামতের ভিত্তিতে আমার আজকের আলোচনা-

আমরা সবাই জানি করোনা মহামারীতেও বাংলাদেশে ধর্ষন জনিত হত্যাকান্ড একদিনও থেমে নেই অনেকেরই প্রশ্ন কেন হচ্ছে কেন প্রশাসন এদের ক্রস দিচ্ছেনা? রাগে ক্ষোভে মেয়েরা বিভিন্ন পোস্ট ও করছে তখন একটা পক্ষ বলছে সরকার বাল্য বিবাহ বন্ধ করছে ধর্ষন তো হবেই!!

আমি বিনীতভাবে ঐসব লোকদের বলতে চাই ধর্ষনের সাথে বাল্য বিবাহের কোন সম্পর্ক নাই কারন ধর্ষকরা বেশিরভাগ বিবাহিত এবং তাদের টার্গেট ছোট ছোট বাচ্চারা.. আপনাদের কথা শুনে মনে হয় কোন ব্যক্তি একটা কম বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করতে গিয়েছিলো বিয়েটা হয়নি তাই ধর্ষন করে ক্ষোভ নিবারণ করছে..

একসময় দেশে বাল্যবিবাহ ছিলো, সেই সাথে ছিলো রেকর্ড পরিমান শিশুমৃত্যু,
ছিলো অপুষ্টিতে জর্জরিত অগনিত শিশু মায়েদের সংখ্যা তখন আমরাই সামাজিক আন্দোলন করে বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে শিশুমৃত্যুর হার রেকর্ড পরিমান কমে গেছে।
এটার সাথে জড়িত মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপার মেয়েরা শিক্ষিত হবার একটা সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদাজিয়া স্কুলে উপবৃত্তি প্রচলন করেন অভিভাবক দের মাঝেও ব্যাপক পরিবর্তন হয় তারাও মেয়েদের বিষয় সচেতন হয় তার ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কলেজেও মেয়েদের উপবৃত্তি দিচ্ছে!

বাল্য বিবাহ রোধে প্রশাসন সহ স্হানীয় প্রতিনিধি, তরুন সমাজ এবং এনজিও গুলো ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে এটা রোধ করা একটা যুদ্ধ ছিলো এখনো এটা পুরোপুরিভাবে রোধ করা যায়নি তবে ২০২০ সালে এসে এ আমরা কি শুনছি? কেন শুনছি?কারা এসব বলে আবার মেয়েদের পিছিয়ে দিতে চায়?

বিয়ে জিনিষ টা একটা সারাজীবনের প্রশ্ন এটা রাষ্ট্রীয় দায়ভার নয় এটা একটি সামাজিক ইস্যু আপনারা বলতেই পারেন বিয়া করবো আমি রাষ্ট্রের সমস্যা কি?তাইতো!!
কিন্তু সমস্যা তো আছেই শিশুমৃত্যু হলে রাষ্ট্রকেই হসপিটাল বানাতে হয় ডাক্তারের বেতন দিতে হয় আরো কত বদনাম হয় আপনিতো ভাই সন্তান জন্মের প্রস্তুতি নিয়াই খালাশ..
আমাদের বিভিন্ন আইনে শিশুদের বিভিন্ন বয়সের কথা উল্লেখ আছে এই আইনে একজন ছেলে ২১ বছর এবং মেয়ে ১৮ বছর হলে বিয়ে করার উপযুক্ত ধরা হয়..বলবেন আপনি ধরার কে?
তাইতো আমি ধরার কে?তবে শুনুন আমি হলাম আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।

এসব বয়সের ছেলে মেয়েরা থাকে আবেগে তাদের কাছে সব রঙ্গিন লাগে বিয়ের মত এত বড় একটা সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করতে শুধু শরীর বড় হলেই হয়না মানসিক পরিপক্বতা ও লাগে, তাই রাষ্ট্র আইন বানিয়েছে!অল্প বয়সে বিয়ে করে সুখীর সংসার একসময় বাস্তবে হতো এরপর সিনেমায় হলেও বাস্তবে তার ছিটেফোঁটা ও নাই প্রেম বিয়ে হলো একটা ক্ষনস্হায়ী আবেগ তত তাড়াতাড়ি জীবনে আসে তত তাড়াতাড়ি আবার চলেও যায় বাচ্চা মেয়েরা বিয়ের পর আরেকটা বাচ্চা জন্ম দিয়ে সে হয়ে যায় ছন্নছাড়া সে নিজেই বুঝেনা সে কাকে সামলাবে!!
আমাদের দেশে বয়স নির্ধারন করার আরেকটি কারন হলো সাবলম্বী বিয়ের আগে মেয়েপক্ষ খুজে বিলগেটস আর ছেলেপক্ষ কম বয়সী ঐশ্বরিয়া এই বিলগেটস হতে ছেলেদের আর বিয়ের বয়স ধৈর্য্য কোনটাই থাকেনা সেটাও একটা ফ্যাক্ট!যারা কম বয়সে বিয়ে করে তারা ভাবে বিয়ের পরও বাপের পকেট থেকে টাকা নিয়া বৌ খাওয়াবে আর সারাদিন বাসায় বসে হানিমুন করবে আর রাতে আশ্চর্য প্রদীপ এসে জানালায় চালডালের প্যাকেট রেখে যাবে। আবার যারা ইনকাম করে তারাও ভাবে বৌ তো এসে কয়টা ভাত ই খাবে আমরাও তো খাই সমস্যা শুরু হয় বিয়ের কিছুদিন পর আস্তেআস্তে জীবনের রং ফিকে হতে শুরু করে সংসারে খরচ বাড়ে, সদস্য বাড়ে তখন শুরু হয় পারিবারিক কলহ।

এবার আবার রাষ্ট্রের পালা কেস, মামলা,পুলিশ এসবই রাষ্ট্রের যোগান দিতে হয় তাহলে রাষ্ট্র কি বাল্যবিবাহ রোধ করে ভুল করছিলো?ডিভোর্স পরিপক্ব মানুষের ভিতরও হয় এবং এটা বিগত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা আরেক ইস্যু এই দুটোকে এক পাল্লায় মাপলে হবেনা.. রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সব আইন নয়, আইন মানুষের প্রয়োজনে এবং পরিবর্তনশীল। বাল্যবিবাহের মত একটি অপরাধ কে যারা ধর্ষন কমাতে মদদ দিতে চান তারা না বুঝেই ছোটছোট ছেলেমেয়েদের উস্কানি দিচ্ছেন মনে রাখবেন বাংলাদেশে বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় চরমভাবে হানা দিয়েছে ১৩ বছরের একটি মেয়ে ৭০ বছরের লোককে বিয়ে করাটা রীতিমত একটি অপরাধ। একজন আরেকজনকে দেখে শিখে কারন খারাপ বিষয় গুলোকে ফলো করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি একটা মানুষ একটা বয়স পর্যন্ত তার নিজের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা সেটাই হলো আইন

তাই পুলিশ বা স্বেচ্ছাসেবীদের এসব কাজের ট্রল বা বাজে কমেন্ট এর জন্য আপনি আইনিভাবে ফেসে যেতে পারেন সব বিষয়ই আমাদের নেগেটিভ মতামত প্রদানে বিরত থাকা উচিৎ!!

আপনারা যদি দায়িত্ব নেন আপনাদের গরীবের প্রতি সদয় হয়ে কোন বয়স্ক লোকের কাছে মেয়ে বিয়ে দিবেন এবং সওয়াব হাশিল করবেন শিশুমৃত্যু কিংবা ডিভোর্স হলে সব দায় দায়িত্ব আপনাদের তাহলে সরকার কে আমরা অনুরোধ করতে পারি দেশের সব শিশুকে বিয়া দেয়া হোক এবং উপহার সামগ্রী নিয়ে বিয়াও খেয়ে আসতে পারি….!!

লেখকঃ জান্নাতুল ফেরদৌস সারা

                   আইনজীবি ও সমাজসেবী

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2018 News Smart
Design By: ServerSold.com