শরীয়তপুর সংবাদদাতা :
ফোন করলেই মেলে খাদ্য সহায়তা, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে, সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের শিল্পকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন। করোনার বিস্তার রোধে মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের করোনা মোকাবিলার জন্য মানবিক সহায়তার একটি কার্যক্রম চালু করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান। গত ১ এপ্রিল ন্যাশনাল ব্যাংক শরীয়তপুর শাখায় মানবিক সহায়তা নাম দিয়ে একটি হিসাব খোলেন। ওই হিসাব নম্বরে তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারি, প্রবাসী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা সহায়তা দেন। এরপর শুরু হয় মানবিক সহায়তা মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম।
গত এক মাসে কর্মহীন ও দিনমজুর শ্রেণির ২ হাজার ২৫৮ পরিবার সহায়তা পেয়েছেন। এই সহায়তা মানুষের বাড়ি পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়েছেন শরীয়তপুরের ২০ জন তরুণ–তরুণী।
ফোনে সহায়তা চাওয়া ব্যক্তির নাম–ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। পরের দিন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন এই তরুণ–তরুণীরা। তাদের ১৬ জন স্থানীয় বিডিক্লিন নামের একটি সংগঠন এবং ৪ জন প্রথম আলো বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত। কাজটি সমন্বয় করে বিডিক্লিন নামের সংগঠনটি।
সদর উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাবেয়া আক্তার পৌর শহরের বিভিন্ন হোটেলে মসলা বাটা ও পানি সরবরাহের কাজ করতেন। গত ২৬ মার্চ থেকে হোটেল বন্ধ। ফলে কাজ হারান রাবেয়া। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের কাছ থেকে নিয়ে কয়েক দিন চলেছেন। এমন অবস্থায় জানতে পারেন, ডিসি অফিসের ফোন নম্বরে কল করলে খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায়। তিনি কল করেন। তিনি বলেন, ‘ভয়ে ভয়ে ফোন করি। পরের দিনই তাঁরা আমার বাড়িতে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ পৌঁছে দেন। যা পেয়েছি তা দিয়ে কয়েক দিন চলতে পারব।’
৫ এপ্রিল থেকে কল করলেই সহায়তা বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়। শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এই সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বিডিক্লিনের জেলা সমন্বয়ক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা মাঠে নামি মানুষকে সচেতন করতে। পাশাপাশি আমাদের পক্ষ থেকে কিছু সহায়তাও দিতে থাকি। তখন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছ থেকে অনুরোধ আসে ডিসির মানবিক সহায়তা মানুষের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আমাদের ২০ জন কর্মী দুটি দলে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করছি। কখনো মোটরসাইকেলে করে, কখনো মাথায় করে মানুষের বাড়ি সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি। দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা প্রত্যেকে খুশি।’
জাজিরার ইউএনও জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ফোন কলের বিপরীতে জাজিরায় ৪০০ পরিবারকে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় কর্মরত ১৪ ব্যক্তিকে নিয়ে একটি দল গঠন করেছি। তাঁরাই যাচাই–বাছাই করে ওই সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, ডিসির মানবিক সহায়তার তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ১১ লাখ ২৩ হাজার টাকার খাদ্যসহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ১০৮ এবং অন্য উপজেলাগুলোতে ১ হাজার ১৫০ পরিবারকে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭৯ মেট্রিক টন চাল এবং ৬৭ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এগুলো জেলার ৬৪ ইউনিয়ন পরিষদ ও ছয়টি পৌরসভার মাধ্যমে ৮০ হাজার ৮০০ ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের ফোনে কল করলে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রমে যারা সহায়তা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ২০ তরুণ–তরুণীর দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মানবিক সহায়তার এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।
Leave a Reply