এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা খুলনায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলার ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৬০৮টি কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা খুলনায় সরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলায় অবস্থানরত ১১টি পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ কন্টেইনার জেটি থেকে নিরাপদ স্থান অ্যাংকোরে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খুলনা জেলা সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, মঙ্গলবার বেলা ১২টার আবহাওয়ার বুলেটিন অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। খুলনার আকাশ মেঘলা রয়েছে। গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। মাঝেমধ্যে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে হালকা দমকা বাতাস বইছে।
তিনি জানান, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ‘আম্ফান’ আরো শক্তিশালী হয়ে সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছে। সুপার সাইক্লোন কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুপার সাইক্লোন কেন্দ্রে কাছে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে সুন্দরবন উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলায় অবস্থানরত ১১টি পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ কন্টেইনার জেটি থেকে নিরাপদ স্থান অ্যাংকোরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকেই জাহাজগুলো অ্যাংকোরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকেই উপকূলবাসীকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং শুরু হয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া মোটামুটি স্বাভাবিক থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে রাজি হচ্ছে না। বাড়িঘর ও গরু-ছাগল ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে তাদের মধ্যে আগ্রহ কম। তবে, বুঝিয়ে হলেও তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
সুন্দরবন উপকূল সংলগ্ন কয়রা উপজেলা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন কবির জানান, মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ মোটামুটি স্বাভাবিক থাকায় বেলা ১২টা পর্যন্ত কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি। তবে, দুপুরের পর থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া শুরু হবে জানান তিনি।
দাকোপ উপজেলার ছুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, দুপুর ১টা পর্যন্ত কেউ সাইক্লোন শেল্টারে যায়নি। তবে বিকাল থেকে ৪টা থেকে সবাই সাইক্লোন শেল্টারে যাবে। খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক জোয়ার্দার জানান, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে খুলনা জেলার ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৬০৮টি কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। তবে, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা দাকোপের ১০৮টি, কয়রার ১১৬টি, পাইকগাছার ৪৫টি ও বটিয়াঘাটার ২৩টিসহ ২৯২টি আশ্রয়কেন্দ্রকে আগেভাগেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটাসহ বিভিন্ন উপজেলায় রেডক্রিসেন্ট, সিপিপিসহ ৩ হাজার ৫৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। এছাড়া বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) আরো ১ হাজার ১০০জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইতোমধ্যে ৬০৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে উপজেলা প্রশাসনকে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জরুরি চিকিৎসার জন্য ১১৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।
সূত্রঃ ইত্তেফাক
Leave a Reply